প্যাটাক্যুয়রিক্যাল নাইটশোয়ে আপনাকে স্বাগতম (পঞ্চম পর্ব )

রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়
অনুবাদ, ধারাবাহিক, প্রবন্ধ, রিভিউ
Bengali
প্যাটাক্যুয়রিক্যাল নাইটশোয়ে আপনাকে স্বাগতম (পঞ্চম পর্ব )

ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Episode-5)

পূর্ববর্তী পর্ব এখানে>>>

শেষ পর্ব পড়ুন এখানে>>>>

    “অ্যান্টি-ব্যাচেলার মেশিনের” বৈজ্ঞানিক কৌতুকে চড়ে “কে জানে কোথায় কখন” প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কাব্যতত্ত্বের নান্দনিক মূল্যবোধের অনুসন্ধানে “The Tell-Tale Heart” আবির্ভূত হবে “প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির বন্দীশালার” পর্দাফাঁস করা গল্প বলতে এবং কবিতার মূল্যনির্ণয়ের মানদণ্ডটি নতুন করতে বসবে প্যাটাক্যুয়রিক্যাল মানদণ্ড অর্থাৎ “প্যাটাক্যুয়রোনরম্যাটিভিটিস্‌” দিয়ে।

       প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত চিহ্নিত পাঁচটি গাথা চার্লস বার্ন্সটাইনের ১৪০ গাথার এই ফ্যান্টাসির স্পার্ক। বাংলায় ব্যালাড হ’ল গাথা বা গীতিকা অর্থাৎ সেই ছন্দবদ্ধ বাক্‌, দিশাগ্রস্ত গামীর আধার থাকে যাতে। এই গামী সেই শব্দ, সুর, ধ্বনি, যারা অন (on) থাকে গানের সুরে। এই গান শুধু শব্দ সুর তাল লয় ভাবের ধারক নয়, সে অভিজ্ঞতা জ্ঞান তথ্য বিশ্বাসেরও ধারক। তো গাথার সেই ছন্দ ছদ্‌ ক্রিয়ামূলের বংশজাত, ছাদন দান করে যে, রহঃস্থিত অর্থাৎ অস্তিত্বকে তার বাস্তব স্বরূপ থেকে, অতীত থেকে সরিয়ে নেয়। ছন্দের এই রহস্যরূপ মূর্ত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের স্ফুলিঙ্গে─ “স্ফুলিঙ্গ তার পাখায় পেল/ক্ষণকালের ছন্দ,/উড়ে গিয়ে হারিয়ে গেল/সেই তারই আনন্দ”[1]। স্ফুলিঙ্গের ক্ষণকালের এই ছন্দ, শিখার এই অসম কিন্তু সামঞ্জস্যপূর্ণ বিন্যাসের নৃত্যই বার্ন্সটাইনের এই গাথা, যার প্রতিটা অধ্যায় রচিত হয়েছে ব্যালাডের এক একটা গাথার মতো। তাঁর অভিজ্ঞতার আলোয় প্রতিটা অধ্যায়ে সূচিত হয়েছে ভাবনার বিস্ফোরণ। সমাজের রুক্ষ্মতা ও ধূসরতার যাবতীয় ইঙ্গিত নিয়ে বেজেছে আকস্মিক বেদনার সংকেত। প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কাব্যজগতে আমাদের পারস্পরিক সহাবস্থানের বিতর্কিত বিষয়ের ঘূর্ণাবর্তে বার্ন্সটাইনের ফ্যান্টাসি ট্রিগার করেছে পাঠকের কল্পনাকে, হৃদয় ও মেধার সমন্বয়ে বোধের সম্প্রসারিত পরিসরে খোঁজ করেছে শুভবোধের।

অ্যান্টি-ব্যাচেলার মেশিন :

         কৌতুকপ্রিয় বার্নস্টাইন তাঁর প্যাটাক্যুয়রিক্যাল যাত্রাপথে এমন একটি গাথার আবিষ্কার করেছেন যেখানে দৃশ্য-কৌতুক থেকে শব্দ-কৌতুকে রূপান্তরের প্রয়াস। কারণ এই অ্যান্টি-ব্যাচেলর মেশিনের বৈজ্ঞানিক ভিত রচনায় ব্যবহৃত হয়েছে ফরাসি-মার্কিন চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর মার্সেল দুশাঁপের সেই বিমূর্ত শিল্পকলার ফিজিক্স, যা দিয়ে নির্মিত হয়েছিল তাঁর “The Large Glass” ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যের দৃশ্যের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল “Bride Stripped Bare by Her Bachelors, Even” নামক এক অনিয়তাকার অস্বচ্ছ টেক্সটের শ্লেষ, “a ‘literary’ text, as amorphous as possible”[2] যেখানে দুশাঁপের সমৃদ্ধ কল্পনায় জারিত হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নের সূত্রগুলোর কাল্পনিক পরিসর। চোখের জন্য কাচ আর কানের জন্য টেক্সট, একে অপরের পরিপূরক হয়ে যুগপৎ সৃষ্টি করেছে বার্ন্সটাইনের কবিতার দর্শন, যেখানে কবিতার দৃশ্যময়তা ও বৈজ্ঞানিক শ্রাব্যতা কবির প্রসারিত চেতনার পরিসরে হয়ে উঠল প্যাটাক্যুয়রিক্যাল।

         নিত্যদিন ঝাঁক ঝাঁক ফোটন কণার অব্যাহত স্রোতে এই পৃথিবীর প্রাণের স্পন্দন আর ভূগোলের বিস্তার আমাদের চোখের সীমানা নিয়ে ছেলেখেলা করে। বেঁধে রাখা দৃষ্টিতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শুরু হয় কবির অ্যাডভেঞ্চার। চোখের দর্শন কবির কল্পনা স্বপ্ন আর জীবন সম্পর্কে মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির ফিলটারে পরিবর্তীত হতে হতে, মিডিয়ার অস্বচ্ছ ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে পরিণত হয় বিমূর্ত ভাবনায়। আর সেই ভাবনা প্রকাশ করতে কবি শব্দের এক সেন্সেশন তৈরি করেন, যে সেন্সেশন ধরে সংগীতের যুক্তির মতো চেতনাকে এক্সপ্লোর করলে ফুটে ওঠে সময়গ্রাফিক ছবির সিরিজ আর বেজে ওঠে ব্যালাডের সুর। কবির চেতনার যাদুদণ্ডটির স্পর্শে দৃশ্য থেকে বেজে উঠছে সঙ্গীতের মূর্ছনা। সেই সুরে সুর মেলাতে শুরু হয় পাঠকের সক্রিয় অভিযান। চোখের দর্শন আর কানের শ্রবণ পরিবর্তন করে নিজেদের অবস্থান। তাই বারীন ঘোষাল ডাক দেন, “চোখের শ্রবণ আর কানের দর্শন হে পাঠক”[3]। দুশাঁপের ভাস্কর্য দৃশ্যের ভেতর গ্রথিত শব্দের এ এক সদর্থক শ্লেষ যাকে দুশাঁপ বলেছিলেন “নঞর্থক শ্লেষের বিপরীতে যা সম্পূর্ণভাবে হাস্যরসের দাবি করে” যা প্রতিধ্বনিত করে বার্ন্সটাইনের কাব্যতত্ত্ব, “কবিতায় অভিব্যক্তি ও অলংকারের খোঁজে এই হাস্যরসের ব্যবহার যা সরাসরি ভাবাবরোহ না হলেও শোভন সৌন্দর্যবোধের প্রকাশের আকাঙ্ক্ষায় বেজে ওঠে বিষণ্ণতা্র সুর”[4](পৃ:২৪৩)।

         বার্ন্সটাইন তাঁর কাব্যযাত্রায় কেবলমাত্র তাঁর বৈজ্ঞানিক যুক্তিবোধের মাপকাঠি দিয়েই কোনোকিছু বিশ্লেষণ করেন না, উপরন্তু তাঁর স্বজ্ঞালব্ধ জ্ঞানের আলোয় খোঁজ করেন কাব্যতত্ত্বের  শিকড়গুলোর যেমন বলেছিলেন ফ্রিৎজফ কাপরা তাঁর The Tao of Physics গ্রন্থে─ “অতীন্দ্রিয়বাদীরা কেবল Tao-এর শিকড়গুলোই বুঝতে পারেন কিন্তু শাখাগুলো নয়; বিজ্ঞানীরা শুধু শাখাগুলোই বুঝতে পারেন কিন্তু শিকড়গু্লো নয়… অথচ মানুষের প্রয়োজন উভয়েরই”।[5] তাই বার্ন্সটাইনের কাব্যযাত্রার পদ্ধতি এই দুয়ের মধ্যে সংশ্লেষ নয় বরং সক্রিয় পারস্পরিক ক্রিয়া ও বিক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দেয় এবং দুশাঁপের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির পাশাপাশি অ্যান্টি-ব্যাচেলর মেশিনের দার্শনিক শিকড়গুলোর খোঁজ করে। বার্ন্সটাইনের অ্যান্টি-ব্যাচেলর মেশিনের দার্শনিক ভিত রচিত হয়েছে ফরাসি লেখক জ্যঁ-জ্যাক লেসার্কলের শব্দদর্শন দিয়ে, যার মূলে আছে তাঁর délire (প্রলাপ) শব্দটি, যা তাঁর Philosophy through the Looking Glass: Language, Nonsense, Desire বইটির অন্তর্গত, যেখানে সেন্স জন্ম নেয় ননসেন্স থেকে অথবা উল্টোমুখে। হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার সুরে কবি বেজে ওঠেন জীবনের বহুমাত্রিক বাস্তবতায়। স্বপ্ন দেখেন সেই সম্ভাব্য পৃথিবীর যার স্বাধীন পরিসরে কবিতার রিদ্‌ম আলোকিত হয়ে আমাদের উত্তরণ ঘটায় প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কল্পনার কোয়ান্টাম কোহেরেন্সে।

প্যাটাক্যুয়রোনরম্যাটিভিটিস্‌ :

       অভিধান বলে নরম্যাটিভ হ’ল যা কিছু প্রতিষ্ঠিত মানদণ্ডের বা নিয়মের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবি বার্ন্সটাইন নরম্যাটিভিটির এই প্রচলিত মানদণ্ড অস্বীকার ক’রে তার পুনর্নবীকরণ করছেন প্যাটাক্যুয়রোনরম্যাটিভিটির উদ্ভাবন করে, যেখানে কবিতার ভ্রূণ নিষিক্ত হয়েছে প্যাটাক্যুয়রিক্যাল গুণে, যার মধ্যে কোনো প্রচলিত “সত্যনিষ্ঠ মনোবৃত্তি” নেই, বরং “কাব্যিক সত্যবাদিতা”র আদর্শ নিহিত। কেন তিনি “সত্যনিষ্ঠ মনোবৃত্তি” নাকচ করছেন তারই আত্মিক উন্মোচন দেখি তাঁর প্রকাশিতব্য Topsy-Turvy কাব্যগ্রন্থে[6]

সততা একরকমের হতাশা
যত্নের মুখোশে।
———–
———–
সততার আবেগ তিরস্কৃত।
সততার মতো সুন্দর কিছু নেই
বাধ্য করা ন্যায়বিচার
আর চূর্ণ করা ভিন্নমতের চেয়ে:
চাব্‌কালেও অকেজো
যা কখনই নান্দনিকতাকে
মুক্তি দেয় না।

            নান্দনিক শব্দের মূলে আছে নন্দ্‌ ক্রিয়ামূল, যেখানে দুটি ক্রিয়ার পারস্পরিক সহাবস্থান─ ন (no) করা এবং অন (on) করা─ অর্থাৎ না-করণ ও হ্যাঁ-করণ এই দুটি করণ দেয় যে, সেইই নন্দ। ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদে প্রধানত তিন দেবতার কথা পাওয়া যায়─ ইন্দ্র, মিত্র ও বরুণ। বাংলা সাহিত্যের মহান দার্শনিক কলিম খান বলছেন, অস্তিত্ব মাত্রই তেজ বা অগ্নি, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা যায় এনার্জি আর সেই অগ্নির আত্মোপলব্ধিই হ’ল ইন্দ্র যাকে আজকের ভাষায় বলা যায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য। সেই আত্মোপলব্ধির ‘যেমন আছি তেমন গুপ্ত থাকব নাকি প্রকাশিত হব’, এই দ্বিধাই মিত্রবরুণ যা প্রতিটা জীবের ভেতর সক্রিয় থাকে। অর্থাৎ জীবকে আত্মোপ্রসারণে প্ররোচিত করে মিত্র আর আত্মোসংবরণের পরামর্শ দেয় বরুণ। আত্মোপ্রসারণ ও আত্মোসংবরণের এই দ্বিধা যার মাহাত্ম্য অনুভূত হয় মানবশিশুর সেই লুকোচুরি খেলার মধ্যে─ কী এক অপার আনন্দে নিজেকে লুকিয়ে ফেলা ও পরমুহূর্তে আবার প্রকাশিত হওয়া, যেখানে বিরাজ করে মহাজাগতিক বিলুপ্তি ও সৃষ্টির কসমিক সাইকেলের রহস্য─ আমাদের পরমাপ্রকৃতির এক সর্বজনীন দর্শন। এই পরস্পরবিরোধী ক্রিয়ার উৎস ‘নন্দ’ পেলে মানুষ আনন্দ পায় অর্থাৎ নান্দনিক দর্শনের ভেতরই বিরাজ করে মানুষের মানসিক তৃপ্তি ও চিরন্তন আনন্দ[7]

      তো এহেন নান্দনিকতা, যা আমাদের সকল আনন্দের উৎস, তাকে নিয়মের নিগড়ে বাঁধার প্রশ্ন কেন? ইংরেজি নরমাল [nor(m)+mal] শব্দের মধ্যে নিহিত আছে মাল শব্দের মাহাত্ম্য। norm বা নিয়ম দিয়ে কোনোকিছুকে মাল-এ পরিণত করা। মল্‌ ক্রিয়ামূলে জাত মাল─ যা কোনো সীমায়িত সত্তায় লালিত, তা সে শব্দের সীমায়িত রূপ হোক বা তার রসবোধের সীমায়িত রূপ। মাল এর পরিচিত প্রতিশব্দ পণ্য (commodity)─ পণ্‌ ক্রিয়ামূলের বংশজাত─ সত্তার আপন অভাব পূরণের বোধ যাতে─ ইংরাজিতে pawn শব্দের কাছাকাছি─ আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনোকিছু বা কাউকে ব্যবহার করা। কবিতাকে norm বা নিয়মের নিগড়ে বেঁধে যখন পণ্য বা মাল (mal)-এ পরিণত করা হয় তখন তাকে normal বা স্বাভাবিক বলার প্রবণতা, যেখানে ইংরেজির malpractice বা malnutrition শব্দের ভাব ফুটে ওঠে এবং সেটাই প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির স্বাভাবিকীকরণ বা normalization প্রক্রিয়া। প্রতিষ্ঠানের অধিকারীগণ তাঁদের বুদ্ধিজাত (মননজাত নয়) মানদণ্ডে বিচার ক’রে এটাও স্থির করেছেন যে এই স্বাভাবিকীকরণ নৈতিক হওয়া বাঞ্ছনীয়─ কারণ, আমার মন বলে (মজা হিসেবে নয় বরং শব্দশ্লেষের পান মুখে নিয়ে আস্বাদ করার জন্য) যে, অক্ষর দিয়ে বিচার করলে moral হ’ল normal-এর ‘অন্তরজাত’। সংস্কৃত ভাষাতত্ত্ব বলে moral হ’ল সেই ন্যায়, যার দর্শন পূর্বে প্রতিষ্ঠিত কোনো বিষয়, বস্তু বা ক্রিয়ার ন্যায় বা অনুরূপ করাকে সঠিক বা উচিত বলে দাবি করে। সুতরাং নতুনের আবিষ্কারে দীক্ষিত বার্ন্সটাইন প্রতিষ্ঠানের নৈতিক মানদণ্ডের বাইরে থাকেন কিন্তু কাব্যিক নৈতিকতার অন্তরে থাকেন এবং অত্যাচার ও দমনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার মন্ত্র উচ্চারণ করেন যা তাঁর কাব্যতত্ত্বকে প্যাটাক্যুয়রিক্যাল নৈতিকতার ক্রমবিকশিত কল্পনা দিয়ে পুনর্নবীকরণ করে চলে।

কে জানে কোথায় কখন?

           একদিকে দ্রষ্টা-সত্তা আর অন্যদিকে পর-সত্তা, মাঝখানে নদী ওই বয়ে চলে যায়─ যে নদীর নাম পার্থক্য। তো নিজের দেহের বাইরে যা-কিছুতে মানুষের প্রতিপালন থাকে, সেই হ’ল তার ‘পর’। নদীটি সেই পরিধিরেখা, যার ওইপারে আছে পর আর সেই পর-এর কাছে আছে দ্রষ্টা-সত্তার আরাম, আনন্দ। তাই সে এই পার্থক্য-নদী অতিক্রম ক’রে পর এর কাছে পৌঁছোতে চায়। ভাষাতন্ত্রে এই পার্থক্যের বোধ জন্ম দেয় নতুন অর্থ নতুন কবিতা। পার্থিব পার্থক্যের অভিজ্ঞতায় অভ্যন্তরীণ পার্থক্যবোধের তির্যক আলোয় দ্রষ্টা-সত্তা উপলব্ধি করে মুহূর্তজাত বাস্তবতার সংগীত, উত্তেজনার সেই তীব্র মুহূর্ত, যেখানে আমরা বসত করি আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ভাষা, ভালোবাসা ও হারানোর ব্যথা নিয়ে, স্পেস-টাইম জুড়ে পাতা সুপারস্ট্রিং এর ক্ষণস্থায়ী স্পন্দনের প্যাটার্ন যেমন। এ এক সময়গত স্পন্দন, অবিরাম সীমাহীন রিদ্‌মে রত। আমরা সেই রিদ্‌ম শুনি, যেখানে কালিক পরিসরে সতত অনিশ্চয়তা আমাদের আত্মার পুনর্নবীকরণ করে চলে, যেখানে প্রতিধ্বনিত হয় ডিকিনসনের “কখন”─ যেখানে “অর্থগুলোর অবস্থান” যেমন বলছেন বার্ন্সটাইন।

প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির বন্দীশালা :

          বেমানান─ এই ফারসি বে-উপসর্গের বাংলা উত্তরাধিকারী হ’ল বি, যা মূখ্য সত্তার বা মূখ্য ধারার বিকল্পকরণ (alternative) বোঝায়। মন্‌ ক্রিয়ামূলে জাত এই শব্দ। মন্‌ ক্রিয়াটির ব্যাখ্যায় কলিম খান বলছেন─ সতত পরিবর্তনশীল এই জগতের আবর্ত্তমানতার সংবাদ শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধের বিচ্ছুরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সেই সংবাদ পৌঁছোয় মনের মণিকোঠায়। সেগুলোর বিচার বিশ্লেষণ করে আমাদের মন বিচার্য সত্তাটিকে মেপে ফেলে এবং তার সম্পর্কে একটা কাজ-চালানো স্থির ধারণায় পৌঁছে যায়। এই পরিমিতকরণ ক্রিয়াই হ’ল মন্‌ ক্রিয়া। তো এই মন্‌ ক্রিয়ামূলে জাত মনন হ’ল মন যেখানে অন(on) থাকে অর্থাৎ সক্রিয় থাকে। আর মানান হ’ল মানা (সংকৃত মান্য) অন(on)থাকে যাতে। অর্থাৎ মনন করে যার যেরূপ প্রয়োগযোগ্য মান পাওয়া গেছে সেটিতে বিশ্বাস স্থাপন করে, সেটিকেই স্বীকার করা ও তদনুযায়ী চলা। আমাদের দেহ-মন দুটোর ওপরেই কর্তৃত্ব করে আমাদের আমিত্ববোধ (self-consciousness)। মানুষের মনের দুটো বিভাগ─ মন ও বুদ্ধি। মন সঙ্কল্প করে কাজে নামে এবং বিকল্প রাস্তাও খোলা রাখে। আর বুদ্ধি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে নিশ্চয়াত্মকভাবে কাজে নামে। মনকে চালিত করে চিত্ত, অনুসন্ধান করা যার কাজ। আর বুদ্ধিকে চালিত করে অহঙ্কার, অনুসন্ধানজাত ফলাফলগুলো গুছিয়ে রাখা যার কাজ। মনের বৃত্তিও দুরকম─ মনন-বৃত্তি ও বুদ্ধি-বৃত্তি। মনন-বৃত্তিতে সঙ্কল্প-বিকল্পাত্মক মনের নির্দেশে চিত্তের অনুসন্ধান, যার স্বভাব একালের ভাষায় ‘ঘরোয়া’ বা homely. আর, বুদ্ধি-বৃত্তিতে নিশ্চয়াত্মক বুদ্ধির নির্দেশে চিত্তের অনুসন্ধান ও অহঙ্কার-এর ফলাফল সংগ্রহ করে চলে মন, যার স্বভাব একালের ভাষায় সরকারী/প্রাতিষ্ঠানিক বা official. এই মনন-বৃত্তিজাত মান অখণ্ডমূলক, যার এলাকা নির্দেশ করা হয় ইংরেজি heart শব্দ দিয়ে আর বুদ্ধি-বৃত্তিজাত মান খণ্ডমূলক, যার এলাকা নির্দেশ করা হয় ইংরেজি head শব্দ দিয়ে। এই মনন-বৃত্তিজাত মান সতত চলমান। যখন সে স্থির, কঠিন, কঠোর বন্দীশালার রূপ ধারণ করে তখন সেই মানদণ্ডসমূহের মান ভেঙে ফেলতে হয়, কারণ সে আর তখন মানান নয়। তাই সেই কবি যিনি স্ববিরোধী বাস্তবতার সঙ্গে সতত চলমান বিক্রিয়ায়, বিশ্বের সাথে সতত পরিবর্তনশীল সম্পর্ক নিয়ে, বাস্তবতার কোয়ার্ক ও অ্যান্টিকোয়ার্কের দোলাচলে, ভাষার অবিরাম সম্মেলনে উৎসারিত এক নতুন চলনের মন্ত্র উচ্চারণ করেন, সেই বার্ন্সটাইন, প্রচলিত বিধিবদ্ধ মানের বিপরীতে বেমানান শব্দটিকে তাঁর প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কাব্যতত্ত্বের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কারণ বার্ন্সটাইন তাঁর Pitch of Poetry (পৃ:২৭৭) গ্রন্থে বলছেন, “আমার কাব্যতত্ত্ব ঘরোয়া, অদ্ভুত-দর্শন (অনাকর্ষণীয়, ভিন্নমতধর্মী, বিষণ্ণ) এবং অন্তরঙ্গ (এমনকী ব্যক্তিগত)”। তাই প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংকৃতি তার সরকারী স্বভাব নিয়ে বুদ্ধি-বৃত্তিজাত মানদণ্ডে বার্ন্সটাইনের ঘরোয়া স্বভাবের মনন-বৃত্তিজাত কাব্যতত্ত্বের মান মাপতে ব্যর্থ হয়।

The Tell-Tale Heart :

           বন্দী শব্দের ক্রিয়ামূলে আছে বন্দ্‌─ বন্‌ এর দান। বন্‌ ক্রিয়াটি ‘ভালো’ অর্থে রয়েছে ফরাসি bon [যার ইংরেজি প্রতিশব্দ well] শব্দে। এই বন্‌ ক্রিয়াটির অস্তিত্ত্ব ইংরেজি bona fide শব্দে, যেখানে ল্যাটিন থেকে আসা bona [bonus শব্দের বহুবচন] ব্যবহৃত হয়েছে good অর্থে। প্রতিটি সত্তাই তার নিজের চালে বন বন করে ঘুরছে, বনছে, বনে যাচ্ছে, বনে উঠছে। তার সেই বনায় সাহায্য করাই বন্‌ দান করা বা বন্দ্‌ করা। সেই বন্দ্‌ যে আচরণে থাকে তাকেই বন্দ বলে। এই বন্দজাত বন্দী শব্দ একইসঙ্গে দুরকম অর্থ বহন করে─ অবরুদ্ধ অর্থাৎ যে কার্য্য স্থগিত করা হয়েছে (closed) এবং বন্দনাকারী অর্থাৎ যিনি বন্দনা (to praise) করেন। যাকে বন্‌ দান করা হয় সে তো একটি বিশেষ পরিধিতে ঘুরতে শুরু ক’রে সেই বৃত্তে বন্দী হয়ে গেলই; বিপরীতে যে সেই বন্‌ দান করল, সেও ঠিক বিপরীত বৃত্তে বন্দী হয়ে যাবেই। অর্থাৎ বন্দনা চলতে থাকলে তা একই সঙ্গে বন্দনাকারী ও বন্দিত উভয়কেই পরস্পরের বিপরীত বৃত্তে বন্দী করে। ইংরেজিতে এই ধারণাটি রয়েছে “prisoner of conscience” রূপে। যেখানে conscience কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রচলিত ঠিকভুলের চাপানো ধারণা বোঝায়, যা স্বভাবতই বন্দী করতে চাইবে নতুন আবিষ্কারের মন্ত্রে দীক্ষিত ও সচেতন মানুষ, যাঁরা conscience এর বদলে consciousness কে গুরুত্ব দেন। যে কাব্যতত্ত্ব কবিদের আপন চেতনালোয় সত্যাসত্যের ঠিকভুলের নিজস্ব মতবাদ, যা ভণ্ডামিমুক্ত ও আপন অভিজ্ঞতালব্ধ এবং অকৃত্রিম আন্তরিক সদিচ্ছায় গৃহিত মতবাদ নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানায়, তখন জনগণের শক্তি সীমাবদ্ধ করতে প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতি সেই কাব্যতত্ত্বকে বন্দী করে। এডগার অ্যাল্যান পো-এর “The Tell-Tale Heart” গল্পের প্রেক্ষাপটের উল্লেখ করে তাই বার্ন্সটাইন প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির চাপানো প্রচলিত স্বীকৃত মূল্যবোধের তক্তার নীচে প্রকৃত আবিষ্কারধর্মী নতুন কবিতার মূল্যবোধের চাপা পড়া স্বর শোনার জন্য আহ্ববান করছেন।

————-Cock-a-doodle-de-dooooooh————–

@@@ এবারে শুরু করা যাক চার্লস বার্ন্সটাইনের ফ্যান্টাসির পঞ্চম পর্ব  @@@

প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কল্পনা : মিডরাশিক নীতিশাস্ত্রবিরোধিতা এবং আনমিতলজির[8] প্রতিশ্রুতি
The Pataquerical Imagination:
Midrashic Antinomianism[9] and the Promise of Bent Studies
১৪০টি গাথার এক ফ্যান্টাসি

LXXIII. অ্যান্টি-ব্যাচেলার মেশিন (Anti-bachelor machines)

           কাব্যনির্মাণের পরিভাষায় ব্যাচেলর মেশিন হ’ল অনুৎপাদক, সৃজনশীলতাহীন, অনাত্মবেদী প্রক্রিয়া, দুষ্টচক্র (অথবা আত্মবদ্ধ/আত্মবিলোপী), এমন একটি যন্ত্র যা নিজের বাইরে বেরোতে পারে না। এর সঙ্গে délire[10] শব্দের সংযোগ আছে (প্রলাপ, জ্যঁ-জ্যাক লেসার্কলের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত) যা বিপথগামী, যুক্তি থেকে বিযুক্তিতে, ভুল করে, প্রলাপ বকে। যদিও সম্ভবত একে প্যাটাক্যুয়রিক্স, বা অ্যান্টি-ব্যাচেলর মেশিন বলাই ভালো। “ব্যাচেলর মেশিন” (machine célibataire) শব্দটি দুশাঁপের “Bride Stripped Bare by Her Bachelors, Even” (“Large Glass” অর্থাৎ “Chocolate Grinder”) ভাস্কর্যটির নিম্নস্থানের অংশ। ফ্রান্‌ৎস কাফকা তাঁর The Penal Colony বইটিতে নিয়মানুবর্তী করার জন্য যে শাস্তিমূলক যন্ত্রটির কথা বলেছিলেন মিশেল ক্যারোজ্‌স তাঁর Machines célibataires বইতে তার ব্যবহার করেছেন। রেমন্ড রাসেলের Impressions of Africa, পো-এর কিছু যন্ত্র আর অতি অবশ্যই অ্যালফ্রেড জেরির রচনার ভাবনাকে প্রসারিত করেছেন ক্যারোজ্‌স। এই সূত্রটি গিলস দেলেজে ও ফেলিক্স গুয়াতারির Anti-Oedipus, এবং মিশেল দ্য সার্তের Ars de Faire[11] রচনা অবলম্বন করে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

XC. প্যাটাক্যুয়রোনরম্যাটিভস্‌ (Pataqueronormativities)

           আমি শুধু আমার মতো যারা তাদের মতো হতে চাই।

      শিল্পের ইতিহাস সমাজের ইতিহাসের মতোই স্বাভাবিকীকরণের কলঙ্কে পরিপূর্ণ। সময়ের সাথে সাথে যেমন নৈতিক ও নান্দনিক মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়, তেমনি যাঁরা কর্তব্যপরায়ণতা ও নৈতিক গুণাবলীর ভিত্তিতে কবিতার মূল্যায়ন করেন, তাঁদের দ্বারা যেসব কাব্যতত্ত্ব ও ব্যক্তিরা পূর্বে নেতিবাচক বিচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁদের পুনর্মূল্যায়ন হয়। এই পুনর্মূল্যায়ন ইয়াং হেগেলিয়ান পর্দাফাঁসকারীদের জন্য পুনর্নবীকরণ (মহীয়ান) করার এক নিয়মের সুত্রপাত করে, যেখানে শিল্পের লক্ষ্যে কর্তব্য ও নৈতিকতা বজায় থাকে, কিন্তু তখন সে নতুন, নীতিগতভাবে উন্নত নৈতিকতা এবং আমূল সংস্কৃত ও বিশুদ্ধ নান্দনিক দায়িত্বের আধিপত্য করে।[12]

       কিন্তু নন্দনতত্ব নৈতিকতার হাতিয়ার নয়, বা তাতে আবদ্ধ নয় কিংবা তার দ্বারা সম্পন্নও হয় না। নান্দনিকতা ফলিত নীতিশাস্ত্র নয়।

      কার্যত এ হ’ল প্রকৃতির এক অনমনীয় আইন, যার নতুন গোঁড়ামিগুলো পুরোনোকে প্রতিস্থাপিত করে,[13] ঠিক যেমন অন্য আর কিছুর সম্ভাবনা ভাবতে পারার মতো বাস্তবতাহীন কল্পনাপ্রবণ রোমান্টিকতার বিভ্রম।

      তবুও আমাদের ভাবতে হবে বিকাশমান কাল্পনিকতার কথা।

XCIV.

      এই অংশটি ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁকা রাখা হ’ল।

XCVII. কে জানে কোথায় কখন? (Who knows where or when?)

কিছু ঘটনা প্রথমবার ঘটলেও
আবার ঘটছে বলে মনে হয়
আর তাই মনে হয় আমাদের দেখা হয়েছে আগে
যারা হেসেছিল আর ভালোবেসেছিল
তবে কে জানে কোথায় কখন?
লরেঞ্জ হার্ট

আলোর এমন এক তির্যকতা আছে
শীতের দুপুর-
যেন গির্জার সংগীতের মতো
আক্রান্ত করে
স্বর্গীয় বেদনা, আমাদের দেয় —
আমরা কোনো ক্ষত খুঁজে পাই না,
কিন্তু অভ্যন্তরীণ পার্থক্য
যখন অর্থগুলো
কাউকে শেখানো যায় না—
হতাশার এক চিহ্নমাত্র-
এক রাজসিক দহন
বাতাসে বহে-
যখন আসে, ভূদৃশ্য তা শোনে—
ছায়া- তাদের নিঃশ্বাস ধরে রাখে
যখন চলে যায়, তখন এক দূরত্বের মতো
মৃত্যুমূর্তিতে—[14]

           পূর্বে প্রকাশিত সমস্ত সংস্করণ অনুসারে ডিকিনসনের “There is a certain Slant of light” কবিতার অষ্টম পঙ্‌ক্তিটি শুরু হচ্ছে “Where the Meanings, are.” কিন্তু হলোগ্রাফ পান্ডুলিপি অন্যরকম গল্প বলছে বলে মনে হয়। ডিকিনসন অষ্টম লাইনের প্রথম শব্দটি When, লিখেছিলেন, Where নয় :

কিন্তু অভ্যন্তরীণ পার্থক্য
যখন অর্থগুলো

     আমি হলোগ্রাফের তিনটি when –এর মধ্যে কোনও অভ্যন্তরীণ পার্থক্য দেখছি না। যেমন অষ্টম লাইনটি :

        একই হলোগ্রাফের তেরো ও পনেরো লাইনের শুরুর সঙ্গে তুলনা করুন, যার প্রতিলিপি হয়েছে সর্বদাই When:[15]

           এ এক চমকপ্রদ পার্থক্য, যা ইঙ্গিত করে অর্থ এক স্থিতিকালের বিষয়, অবস্থানের নয় এবং অন্যান্য উপাদানের বৈশিষ্ট্যসহ ডিকিনসনের পাণ্ডুলিপির পরিসরগুলোর সেই অভ্যন্তরীণ পার্থক্য ক্রমিক প্রক্রিয়ায় অর্থ উন্মোচন করে, যা পঠন ও তাৎপর্য বোঝার ক্রিয়া থেকে উদ্ভূত। এটা এমন কিছু বিস্ময়কর নয় যে ডিকিনসন এমারসনের সুরে সুর মিলিয়ে এখানে বা আরো সাধারণভাবে তাঁর অন্যান্য রচনার কিস্তিগুলোতে প্রত্যাশা করেছিলেন সেই কবিতা, যাকে আমরা ধারাবাহিক কবিতা বলছি। এ যেন সেই ধারণা করার আগেই ডিকিনসন প্রস্তাব দিচ্ছেন যে, ভাষা এমন এক তন্ত্র যেখানে পার্থক্য তৈরি করে অর্থ, এককালিক নয়, যেমন “কোথায়” দিয়ে বোঝায়, বরং এটা কালানুক্রমিক, একটা সময় জুড়ে, যেমন “কখন” দিয়ে বোঝায়। আহা, পার্থক্য যুগ যুগ জিও : কারণ “কখন” পার্থক্যবোধের জন্ম হয় পার্থক্যের অভিজ্ঞতা থেকে, বোধের বিষমকোণ বা তির্যকতা দিয়ে, যা সেই সংশয়, যার অবস্থান দুজন মানুষের মধ্যে থাকা ব্যবধানে, যখন তারা সংযোগ তৈরি করতে চেষ্টা করে আর প্রায়শই ব্যর্থ হয় (যাকে বলা যায় প্রতিকারহীনতা)। গ্রাফিক উপস্থাপনা ও অর্থবোধের অনুমিত ফ্রেমের বাইরে ডিকিনসনকে পড়ার প্রতিরোধ হ’ল ভিটগেনস্টাইনের “দৃষ্টিকোণের অন্ধত্ব”-র একটি সংস্করণ : কখন/কোথায় (বা হলোগ্রাফ/মুদ্রণগতভাবে নির্ধারিত মান) duck/rabbit মূর্তির এক পাঠ্য সংস্করণ। বিভিন্ন অনুমানের ভিন্নতা তৈরি করে ভিন্ন কবিতা; ফ্রেম লক তখনই ঘটে যখন ফ্রেমের ভিন্নতায় চিহ্নিত অন্য সংস্করণগুলোর সম্ভাব্যতা স্বীকারে প্রতিরোধ থাকে; কিংবা কোনও একক স্থিতিশীল সমাধান নেই, কোনো নির্দিষ্ট “অরিজিনাল” নেই, বরং সংস্করণগুলোর এক বিন্যাস থাকতে পারে সেই সম্ভাবনা অস্বীকার করা হয়।

        পছন্দের ভেতর অবশ্যই দ্ব্যর্থতা থাকে এবং কোনটা পছন্দ করা হয় তা নির্ধারিত করে   আমাদের প্রত্যাশা : আমাদের অভ্যন্তরীণ মডেলের ওপর ভিত্তি ক’রে কবিতাটির কী বলা উচিত আর সে দেখতে কেমন হবে, এই ফ্রেমে আমাদের আটকে রাখে। এ এক রাজসিক বিভ্রম, যা বিকল্প স্বীকার করে না, অপ্রত্যাশিত চিহ্নগুলো বাদ দেয় কাব্যিক ত্রুটি হিসেবে। অপরিমেয় ফ্রেমগুলো (বাহ্যিক পার্থক্য) বিভিন্ন অর্থ (অভ্যন্তরীণ পার্থক্য) তৈরি করে। এই কবিতাটি সংস্করণ বিষয়ে, অন্যগুলো বর্জন করে একটা সংস্করণকে লক্ষণীয় করার বিষয়ে, পার্থক্যকে দমন করার বিষয়ে – বহুবাদিত্ব- ফ্রেম লকের কারণে।

        ডিকিনসনকে দেখতে ও শুনতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। আমরা জানি না কখন বা কোথায় তার কাজের মুখোমুখি হতে পারি, কারণ সে বহির্মুখী সেই ভবিষ্যতের দিকে, যেদিকে আমরা এগিয়ে আসছি, কিন্তু পৌঁছোতে পারছি না। “কিছু ঘটনা প্রথমবার ঘটলেও/আবার ঘটছে বলে মনে হয়”। ডিকিনসনের রেখে যাওয়া উপাদানের স্ক্যান করলে তাঁর রচনার তাৎপর্যের নবরূপ উদ্ভূত হয়।

XCVIII.

নগর মানে চোখের জল।[16]

XCIX. প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির বন্দীশালা (The prison house of official verse culture)

        বেনিংটন কলেজের “Advice for Graduating MFA Students in Writing: The Words and the Bees” অনুষ্ঠানের সূচনাপর্বের বক্তৃতায় অ্যাসোসিয়েট রাইটিং প্রোগ্রামের নির্বাহী পরিচালক ডি ডব্লু ফেনজা সমবেত তরুণ লেখকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে, সাহিত্য পুরষ্কার ব্যবস্থার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা “নৈতিকভাবে বেমানান”। ঠাণ্ডা লড়াইয়ের যোদ্ধাদের জন্য ‘অনৈতিক’ হ’ল গতানুগতিক; বেমানান মন্তব্যটি তাঁর প্যাটাক্যুয়রিক্যাল আন্তরিকতার প্রকাশ। তবে এই প্রসঙ্গে তাঁর আরও উল্লেখযোগ্য পরোক্ষ বক্রোক্তিটি হ’ল─ যাঁরা “ভিটগেনস্টাইন, মার্ক্স, ফুকো, হুকস, ফ্যানন, ল্যাকান, স্পিভাক, লিওতার, ক্রিস্টেভা, পাউলেট, বাটলার এবং গাট্রুড স্টেইন”–এর রচনার সমর্থনে মুক্তকণ্ঠ, তাঁরা পোকামাকড়ের মতো পরজীবী।

          ফেনজার প্রচারপত্রটা যা তাঁর সম্পাদিত প্রতিষ্ঠানের পত্রিকায় প্রকাশিত(সুতরাং এখানে প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতি কোনো রূপক নয়)আমেরিকার প্রায় প্রতিটি গ্র্যাজুয়েট ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর শিক্ষকদের কাছে প্রেরিত হয়েছিল। এতে নিজের ক্ষতিকারক বায়ুর উৎপাদন বাহ্যত স্বীকার না করেই তিনি আমাকে দোষারোপ করেছিলেন “সাহিত্যে রাজনীতির ক্ষতিকারক বাতাস” ছড়াচ্ছি বলে। ফেনজা এক ব্যতিক্রমী মন্তব্য করেন আমার লেখা ক্রিলির স্মরণিক প্রবন্ধ বিষয়ে, যেখানে আমি “সভাকবিদের ঝরঝরে পরিষ্কার কবিতা ও পুলিৎজার”[17] নিয়ে বলেছিলাম। তারপরে তিনি সাম্প্রতিক সভাকবি এবং পুলিৎজার বিজয়ীদের তালিকা তৈরি করে মন্তব্য করেছিলেন, “ [এই কবিরা লিখছেন যে] ‘ইউনিফর্মিটারিয়ানিজম’-তে আত্মতুষ্টির প্রস্তাব দিতে, যেমন বার্ন্সটাইন দেন,…এটা আরো চরম; এ হ’ল স্বরবধির কাব্যতত্ত্ব নিয়ে লোক খেপানোর অভিপ্রায়; এবং আমি মনে করি এটা নৈতিকভাবে বেমানান”

          ফেনজা ব্লাসফেমির সঙ্গে নান্দনিক পার্থক্যকে গুলিয়ে ফেলেছেন।

        এক দশকের মূল্যে সমকালীন পুরষ্কারপ্রাপ্ত কবিদের সঙ্গে আমার খেপিয়ে তোলা দল গড়ার প্রতি ফেনজার নৈতিক ক্রোধের তুলনা করুন এক শতকের মূল্যবান দর্শন ও কাব্যতত্ত্ব নিয়ে তাঁর ঘোট পাকানোর সঙ্গে। পোকার উপমাটি সূচনাপর্বের বক্তৃতার মূল অহমিকা (উদ্ধৃত অংশটি ছিল “ভিমরুল থেকে সাবধান”)। ফেনজা যুক্তি দেখান যে “সাহিত্য তাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক সমালোচক” যেমন মারজোরি পারলফ আর আমি, যারা নিষিদ্ধ লেখকদলের উপদেষ্টা, তারা “ভিমরুল সদৃশ্য… প্রজননের অদ্ভুত অভ্যাসে আসক্ত পরজীবী”। তিনি ক্রিয়েটিভ রাইটিং শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী শ্রোতাদের কাছে এই ব্যাখ্যা দেন : “উদাহরণস্বরূপ, একটা ভিমরুল যেমন গুটিপোকার পিঠের ওপর ডিম পাড়ার জন্য তার ডিম্বনালি ব্যবহার করে”

         আল ফিলরিইসের Counter-revolution of the Word: The Conservative Attack on Modern Poetry 1945–1960-এর পাঠক : ১৯৪৫-১৯৬০ এর আধুনিক কবিতার ওপর রক্ষণশীল আক্রমণ ফেনজার ভাষার মতোন। ১৯৪৮ সালের নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে আধুনিকতাবাদী কবিতা নিয়ে বলা হয়েছিল তারা যেন একটা “মশা যা আপনার রক্ত ​​চোষে”- অন্য ভাষায় বলতে গেলে, এক “পরজীবী যাকে দমন করা দরকার”। ১৯৫২-তে এক স্যটারডে রিভিউর নিবন্ধে স্টেইনের রচনাকে “হলুদ জ্বর” বলে বর্ণনা করা হয়, যার সঙ্গে “হিংস্র রাসায়নিক পদার্থ স্প্রে করে ক্রমাগত লড়াই করতে হবে, যাতে না জীবাণুগুলি আবার বেড়ে উঠে নতুন সংক্রমণ শুরু করে”।[18]

           ২০১৩ সালের AWP–এর এক বার্ষিক প্রতিবেদনে ফেনজা ওয়াল্টার লিপম্যানের শতাব্দী-প্রাচীন উক্তিটি তাঁর সংস্থার আদর্শ হিসেবে প্রচার করেছিলেন : “আমেরিকার মহান সামাজিক অভিযান এখন আর জনমানবহীন অঞ্চলে জয়যাত্রা নয় বরং পঞ্চাশটি ভিন্ন লোকের অন্তর্ভুক্তি”[19]। এই উক্তিটি নিয়ে ফেনজার অনৈতিহাসিক দখলদারির উদ্দেশ্য হ’ল প্রথাগত উদ্ভাবনকে বরখাস্ত করা আর সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণের প্রচার করা (অনেকের মধ্যে একটি): পার্থক্যের ভেতর দিয়ে প্রতিরোধ নয় বরং শোষণের মাধ্যমে আত্তিকরণ। কিন্তু ফেনজার ব্যাখ্যার বিপরীতে লিপম্যান ১৯১৪ সালে যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, আমেরিকায় মৌলিক উদ্ভাবন, নতুন ধারণা ও “বৌদ্ধিক বিদ্রোহ”(১৯১)-এর প্রয়োজন অবিরাম এবং তার বিপরীতে “অদম্য শত্রু”-র জাতবিচার :

যে প্রাণবন্ত ঐতিহ্য আমাদের বিশাল পুষ্টি দেয় আমি তার নিন্দা করছি না, এটা বোঝা দরকার। আমি তাদের সমালোচনা করছি যারা কেবল খোসাটুকু খাওয়াতে চেষ্টা করে। সামান্যতম প্যারাডক্স ছাড়াই একথা বলা যায় যে ক্লাসিকালিস্টরা ধ্রূপদীদের কাছে সবচেয়ে বেশি বিদেশী। সে কখনই অতীতের সৃজনশীল স্পন্দনের ভেতর নিজেকে রাখে না : তাদের উদ্ভাসে অন্ধ হয়ে থাকে। [বিপরীতে] আমি এখানে যাকে ক্লাসিকালিস্ট বলছি, সে সম্ভবত সৃজনশীল হতে পারে না, কারণ তার মতবাদের নির্যাস হ’ল পৃথিবীতে নতুন কিছু থাকতে পারে না। (187)

         “পৃথিবীতে নতুন কিছুই নেই” মন্ত্র গুনগুন করতে করতে ফেনজা খোসা খাওয়ালেন। বিপরীতে, লিপম্যানের পরামর্শ ছিল,─ অভিবাসীদের নতুন তরঙ্গ আমেরিকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রগতিশীল শক্তি হয়ে উঠবে। অ্যামি পেইথ তাঁর যুদ্ধোত্তর “রাষ্ট্রীয় কবিতা সংস্কৃতি”-র অগ্রগতির ওপর গবেষণামূলক প্রবন্ধে ফেনজার উদ্ধৃতিটির পাশাপাশি স্থাপন করেছেন রবার্ট ফ্রস্টের ১৯৪২ সালের “The Gift Outright” নিয়ে তাঁর আলোচনা, যা তিনি ১৯৬১ সালে জন এফ কেনেডির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পড়েছিলেন। কবিতাটির বিখ্যাত শুরু─ “জমি আমাদের ছিল আমরা জমির হওয়ার আগে”: পেইথের মন্তব্য “অনৈতিহাসিক অনিত্যতা”, অর্থাৎ, বিপথগামী বোধের “অধিকারী” হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, যার ভুল উপস্থাপনা হয় ফাঁকা বা শূন্য বলে। এই ধরনের বিপথগামিতার অবশ্যই নিষ্পত্তি হওয়া উচিত “অধিকারচ্যুতি” দিয়ে, যাকে বলা যায় পরিবর্তনশীলতা মুছে ফেলা[20]

         কবিতার জন্য নেপোহিউম্যানিস্ট আদর্শের সীমা হ’ল, যে রচনা একজনের কাছে নান্দনিক অনুমোদন পায় না, তাকে অমানবিক, দুর্বোধ্য বর্বর বলে দেগে দেওয়া, কারণ সেখানে মার্ক শেল বর্ণিত খ্রিস্টীয় সহনশীলতার সীমাকরণের সূত্র কাজ করে, সেখানে কোনও উত্তরসূরিহীন মানুষের সঠিক হিসাব নেই। মানুষের সমস্ত অনুভূতি ও উষ্ণতার স্বীকার পুনরায় শুরু করার পথ দেখায় : বর্বর চিৎকার অনুমোদনযোগ্য, যদি তা “আমাদের” বর্বর চিৎকার হয়। তারা বলে যে সমস্ত মহান কবিতাই সর্বজনীন বা বোধাতীত, কিন্তু এই ‘মহান’ সেই গুণের প্রসঙ্গে যা কেবল একটি নির্দিষ্ট ও অস্বীকৃত নান্দনিক আদর্শের মধ্যে সীমাবদ্ধ[21]। ফেনজা ও তাঁর সহচক্রান্তকারীদের কাছে একমাত্র তাঁদের নিজস্ব মতবাদই প্রশ্নাতীত মতবাদ হিসেবে স্বীকৃত।

C.

      ভদ্রমহোদয়গণ, যদি কাউকে এই চিন্তাখাতে পড়তে দেখেন তবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।

CII. The Tell-Tale Heart

আমি যদি বনের রাজা হতাম…
প্রতিটা খরগোশ আমাকে শ্রদ্ধা জানাত।
কাঠবেড়ালিগুলো নতজানু হ’ত।
যদিও আমি লেজ আছড়াতাম, করুণা দেখাতাম
প্রতিটি অধীনস্ত চুনোপুঁটিদের জন্য।[22]

       প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতি নিজেকে অ্যাজেন্ডামুক্ত বলে উপস্থাপনা করে, যা তাদের সম্পাদক ও পুরষ্কারদাতাদের মুক্তি দেয় কবিতায় বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি দেখানো বা তাদের পক্ষপাতিত্ব স্বীকার করার প্রয়োজন থেকে। অ্যাজেন্ডা শুধু অন্যদের থাকে। নিউ ইয়র্ক টাইমস রিভিউতে হেলেন ভেন্ডলারের ২০০৬ সালের পরিচিতি থেকে কিছুটা পড়া যাক :

সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে Book Review এর সম্পাদক হিসাবে, [জন] লিওনার্দের পক্ষে ব্যতিক্রমী কবিতার জগতে পথ খুঁজে পাওয়ার সমস্যা হয়েছিল। লিওনার্দ স্মরণ করেছেন, কবিরা “কখনই আপনাকে বলবেন না, আপনি যদি তাদের সেরা বন্ধু, নিকৃষ্টতম শত্রু বা প্রাক্তন প্রেমিককের সমালোচনা করতে বলেন”। “সেখানে সর্বদাই কিছু না কিছু অ্যাজেন্ডা থাকে এবং আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না সেটা কী”। তাই তিনি কবিতা বইয়ের বন্যা পরীক্ষা করার জন্য ভেন্ডলারকে নিয়োগ করেছিলেন, কিছু সমালোচনা নিজেই লিখেছিলেন এবং কিছু অন্য সমালোচকদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই সব নিঃশব্দে করা হয়েছিল। “আমরা কাউকে বলতে পারিনি” বলেছিলেন লিওনার্দ। “এটা তাঁকে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ফেলেছিল”[23]

        এখানে একটা আনন্দদায়ক দ্বৈতভাবনা আছে : যেন মনে হয় লিওনার্দ বলছেন যে তিনি Book Review-কে অ্যাজেন্ডামুক্ত করতে চান, তবে তিনি এটাও বলতে পারেন যে, তিনি এমন এক ব্যক্তির সন্ধানে ছিলেন যিনি সঠিক অ্যাজেন্ডা অনুসরণ নিশ্চিত করতে পারেন। ১৯৭৮ সালে ভেন্ডলার New Yorker –এর জন্য কবিতা সমালোচক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং পরে New York Review of Books এর নিয়মিত লেখক হয়ে ওঠেন। যেহেতু Times, New Yorker, এবং NYRB সবগুলোর মধ্যেই তাঁর যাতায়াত ছিল, তাই তিনি কেবল নিজের অ্যাজেন্ডাকেই সামনে রেখে সন্তুষ্ট ছিলেন না; চ্যালেঞ্জ জানানো সেইসব রচনার প্রকাশ্য নিন্দায় তিনি ছিলেন বিধ্বংসী। জেরম রোদেনবার্গ ও জর্জ কোয়াশা সম্পাদিত America: A Prophecy-এর সমালোচনা করে ১৯৭৩ সালে Times-এ প্রকাশিত তাঁর রিভিউতে এই প্যাটার্নটি দেখতে পাওয়া যায়, যেখানে পরবর্তী New Yorker–এর নিয়োগগুলোর জন্য তাঁর ভাবাদর্শগত সদিচ্ছা প্রকাশ পায়। রোদেনবার্গ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন যে ভেন্ডলারের আক্রমণ প্রতিনিধিত্ব করে

আমাদের মধ্যে যে অনেকে অসহনীয় সীমাবদ্ধতা অনুভব করেছে তা মনে রেখে এক সক্রিয়, নিজস্ব এলাকার আদর্শে গভীরভাবে আবদ্ধ থাকার প্রচেষ্টা।… একটা নির্দিষ্ট কবিতা ভালবাসা এক জিনিস আর অন্যের [অন্য ঐতিহ্য] ওপর তার চরম আধিপত্য দাবি করা আর এক জিনিস। তবুও এগুলো কিছু পন্ডিতদের সাধারণ পাগলামি, যা তারা চিরকাল চালিয়ে যায়।… “মহান” ও “সেরা”-র মতো শব্দগুলোর প্রতি তাদের নির্বোধ নির্ভরতার সঙ্গে।[24]

         “মহান” ও “সেরা”-র ওপর ভেন্ডলারের নির্ভরতা “এইচ. ডি., জুকোফস্কি, রেক্সরথ ওপেন, ফিয়ারিং, প্যাচেন, ওলসন, ডানকান… হ্যারি ক্রসবি… এলসা ভন ফ্রেইটাগ-লরিংহোভেন, মার্সডেন হার্টলি,… লরিন নেইডেকার, মিনা লয়, ম্যাক্স আর্নস্ট, মার্সেল দুশাঁপ, সাদাকিচি হার্টম্যান”[25]-দের অ্যান্থোলজিতে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ঠাট্টা করার ইন্ধন যোগায়। হায়! কী দারুণ কবিদের তালিকা! আনমিতলজির চাবুকের বিরুদ্ধে তাঁর আজীবনের সংগ্রামে নিজের পূর্ণশক্তি প্রয়োগে ভেন্ডলার কোনো দ্বিধা করেননি : “কিছু মনে করবেন না প্রিয় পাঠক, মার্কিন কবিতার অ্যান্থোলজিতে মার্সেল দুশাঁপের অন্তর্ভুক্তি আপনি কখনও ভাবেননি অথবা বেনামি স্কিজোফ্রেনিকরা যেমন করেছিলেন”।

          আরো কিছুটা এগোলে দেখা যাবে ২০০৭ সালে ম্যাগাজিনের কবিতা সম্পাদক হিসাবে পল মুলদুনের অ্যাজেন্ডামুক্ত নিয়োগের বর্ণনায় New Yorker এর বর্তমান সম্পাদক ডেভিড রেমনিক বলছেন : “এ শুধু আপনার মনোমত সেরা কবি বেছে নেওয়ার ব্যাপার নয়… মিঃ মুলদুন বলেছিলেন যে এই চাকরির জন্য তাঁর কোনও বিশেষ অ্যাজেন্ডা নেই”।[26]

         প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতি নিজেকে বৈধ করে তুলেছে নিজের অবস্থান অস্বীকার (বা স্বাভাবিকিকরণ)করে। গত তিন শতাব্দী ধরে কবিতা ও তার ভাষ্যগুলোর কেবলমাত্র গভীর প্রভাবশালী অ্যাজেন্ডার প্রকাশ, এই ম্যাগাজিনকে সফলভাবে চালিত করতে পারতো কবিতা ও কাব্যতত্ত্বের কত উল্লেখযোগ্য বিকাশের দিকে এবং সেইসব কবিতা ও কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধের দিকে, যা রহস্যময়ভাবে মাঝারি মানের মনে হয় তাঁদের কাছে, যাঁরা ম্যাগাজিনের কাব্যিক অ্যাজেন্ডা মেনে নেন না। যাঁরা আমার অ্যাজেন্ডা গ্রহণ করেন না তাঁদের কাছে আমার অ্যাজেন্ডায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনাগুলো কেমন দেখায়, এটা তারই অনুরূপ প্রকাশ তাতে সন্দেহ নেই; কিন্তু বাস্তবে সেইসব বিরোধী কবিতা প্রকাশনাগুলোই সাড়া ফেলেছে, যারা তাদের তীক্ষ্ণ স্বরভঙ্গি অস্বীকার করে না। যুদ্ধ পরবর্তী সমস্ত বিরোধী অ্যাজেন্ডার মূলে আছে চার্লস ওলসনের “Projective Verse”(১৯৫০), ওলসন লিখছেন, মার্কিন ঠাণ্ডা লড়াইয়ের কূটচালের মুখে থাপ্পর কসিয়ে নিজেদের ছাড়া অন্য সবাইয়ের মতবাদ জরিপ করা : “সুতরাং আমরা সেখানে আছি, দ্রুত, সেখানে মতবাদ আছে”।[27] ওয়ালেস স্টিভেন্সের “এটা অবশ্যই বিমূর্ত হতে হবে” এবং “এটার পরিবর্তন আবশ্যক”–এর প্রতিধ্বনি করে রবার্ট ক্রিলি এই বিষয়টিকে স্পষ্ট করে তুলেছেন: “মতবাদে দীক্ষিত করার তীব্র সমালোচনা করে ওলসন একটি বজ্রতুল্য মতবাদের দীক্ষায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন যে এটা অবশ্যই মতবাদ হওয়া জরুরি”।[28]

          কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতি নিজেকে বৈধতা দেয় এই বলে যে, অ্যাজেন্ডামুক্ত বলেই এটা উর্ধ্বতন। কেবলমাত্র এটার ওপর জোর দিয়েই নিজেকে বৈধতা দেয় এমন নয়, একইসঙ্গে তার নান্দনিক ভারকেন্দ্রের বাইরে থাকা কবিদের টোকেন হিসেবে দেগে দেয়। জন অ্যাশবেরি প্রায়শই ঠিক এমনই একটি টোকেন হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছেন। এবং আমিও, যদিও আমি ততবার নয় যতবার চাই :

      ঠিক আছে, মিঃ রেমনিক, আমার ক্লোজ-আপ শটের জন্য আমি প্রস্তুত।

  NYRB-তে চার্লস সিমিক অপ্রত্যাশিত চিহ্নের আনমিতলজিকে তাঁর এক দৃষ্টান্তস্বরূপ বিরূপ সমালোচনায় বিঁধেছেন, যা সিমিকের মতে (যা AWP-এর ডিরেক্টর ফেনজার সঙ্গে মিলে যায়) “ফরাসী সংস্কৃতি ও সাহিত্য তত্ত্বের” সংস্পর্শে এটা বিকৃত হয়েছে : “আপনি যদি কারাগারে আটকে থাকেন তবে আপনার বালিশের নীচে কী থাকতে পারে: এমিলি ডিকিনসন নাকি গাট্রুড স্টেইনের কোনো গ্রন্থ?”[29]

          আমি যদি কারাগারে থাকতাম তবে হয়তো কীভাবে আমার মামলার আবেদন করতে পারি বা কীভাবে এটা ভেঙে বেরোতে পারি, সেই বিষয়ে একটা সারগ্রন্থ পড়তে চাইতাম। সিমিকের মতাদর্শগত অ্যাজেন্ডার প্রসঙ্গটি রূপ পেয়েছে তাঁর সহসম্পাদক সিয়েন ও’ব্রায়েনের লেখা ভূমিকায়, যা প্রকাশিত হয়েছে New British Poetry-তে। ও’ব্রায়েন বাতিল করেন সেই ব্রিটিশ কবিতাকে যা নান্দনিক স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। ভূমিকাটি গর্বের সাথে দাবি করেছে যে “বিভ্রান্তি ও বিচ্ছিন্নতা”-য় পূর্ণ এইজাতীয় “বোধাতীত” “উত্তরাধুনিক” রচনা “যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার”[30] জন্য উৎসর্গীকৃত অ্যান্থোলজি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবুও প্রকাশক পক্ষপাতিত্বের এই স্পষ্ট ঘোষণাকে অরওয়েলিয়ান দাবিতে পরিণত করেছেন যে এই অ্যান্থোলজিটি “চূড়ান্ত”।[31]

        সিমিক মনে করেন আমরা এখনও ঠাণ্ডা লড়াইয়ের মধ্যে বাস করছি, যেখানে কবিতার মূল্য বিচার করা হয় প্রয়োজনীয় ও সর্বজনীন মানবিকতা জাহির করার মধ্যে। ঠিক যেমন ভেন্ডলার কালাপাহাড়ি কবিদের বহিস্কৃত করেছেন, যা তাঁর মার্কিন কবিতা ঐতিহ্যের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐশ্বর্য উপলব্ধি করার অক্ষমতা প্রকাশ করে। সিমিকের স্টেইনকে অপবাদে দেগে দিয়ে ডিকিনসনের মূর্তিপুজো দু’জনকেই উপলব্ধি করার অক্ষমতার নিদর্শন। তাঁর শিল্পকলার দৃষ্টিভঙ্গি একজন কারারক্ষকের। বন্দী করার সুবিধার্থে প্রশমিতকরণকারী আতুরাশ্রমের রক্ষীদেরই কবিতা লেখা উচিত। কবিতার এজাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি কর্তব্যনিষ্ঠার নামে নান্দনিকতার জলাঞ্জলি দেয়, এমনকী কর্তব্যপরায়ণতার কর্তব্যও বিসর্জন দেয়।

        সেইসব প্রকাশনা ও সমালোচকদের নিয়ে আমি ভাবি, কারণ আমার মনে হয় তারা জাতীয় পুরষ্কার সহ আমাদের সংস্কৃতিতে কবিতার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বেশিরভাগটাই নেতিবাচক অর্থে : তারা কবিতাকে সাংস্কৃতিকভাবে নিস্তেজ করে ফেলে, এমনকী যখন তা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা কবিদের নন্দনতত্ত্বকেও প্রতারণা করে, তখনও নান্দনিক উদ্ভাবনের পরিবর্তে নাগরিক নৈতিকতা উন্নয়ন বা স্মৃতিচারণেই নিমগ্ন থাকে।[32] প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতি কবিতার পঞ্চাশ বা একশো বছর পিছনে নয় (এটা এখনও ১৯৫০-এর দশককেও ধরতে পারেনি)(সংস্কারবাদী আধুনিকতাবাদ এখনও খুবই মৌলিক); নিরন্তর লক্ষ্য থেকে দূরে তার অবস্থান। তবুও আমাকে ভুল বুঝবেন না (এমনকী আমি ভুল হলেও বা আপনার প্রতি ভুল করলেও): আমি যে কেবল কথোপকথনের অংশ হতে চাই এমন নয়, আমি যেসব কবিদের গুরুত্ব দিই, তাঁদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে চাই। উপরন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতিতে আমার নিজস্ব সুরক্ষিত ডিজিটাল কুঠুরিটা আমাকে খাড়া করে রাখে (যখন চাটুকতা করে না) আমার সমালোচনাকে তুচ্ছ বলে বাতিল না করে আরেকজন হতাশ প্রেমিক হিসেবে দেখতে (যা আমিই, আর সেটারই মুখোমুখি হতে হবে)। এবং আমি বিশ্বাস করি না, যেসব সমালোচক ও পুরষ্কারদাতাদের সঙ্গে আমার মতের মিল হয় না, তাঁরা “নৈতিকভাবে বেমানান” অথবা যেসমস্ত কবিদের তাঁরা শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, তাঁদের “বেনামি স্কিজোফ্রেনিক” হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে, পর্দাফাঁসকারীরা সহজাতভাবেই হতমানদের থেকে উন্নততর কিছু নয়; পো-এর গল্পে বাসিন্দারা বিদ্রোহের পর বিপরীতভাবে তাদের রক্ষকদের ওপর কঠোরতর হয়ে উঠেছিল।

           এবং সম্পাদকদের দাবি এই যে, সংখ্যাগরিষ্ঠদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী “শ্রেষ্ঠ”-এর অনুসন্ধানে তাঁদের কবিতার অন্তর্ভুক্ত এলাকার পরিধি অ্যাজেন্ডামুক্ত। আপনি যদি একজন বেনামি স্কিজোফ্রেনিক হন, এক উদ্ভট মহিলা হন বা একজন বিকৃত ফর্মালিস্ট হন আপনার রচনায় “বিমূঢ়তা ও বিভ্রান্তি” স্পষ্ট ক’রে তুলতে, তবে সেখানে অন্ধকারের একটা নির্দিষ্ট তির্যকতা আছে যা গির্জার সংগীতের মতো আক্রান্ত করে।

           তবে সম্ভবত এই সাময়িকীগুলোর সমস্যা হ’ল, নির্দিষ্ট ধরনের কবিতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার চেয়ে সেই কবিতা সম্পর্কে গভীর উদাসীনতা, যার ধারণাটি “মানসিক লড়াই”-এর চেয়ে লিরিক সজ্জার ওপর ভিত্তি করে রচিত। এই জাতীয় সম্পাদকদের কাছে কবিতা পড়তে চায় না যারা, তাদের জন্য কবিতার স্বরধ্বনি তৈরি হওয়া উচিত। প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যমে নিয়মিত অনর্থক বকবকানি শোনা যায় যে, “দুর্বোধ্য” কবিতা সেই প্রান্তরে নিয়ে গেছে যেখানে “সুবোধ্য” কবিতার সমূহ ক্ষতি, যা প্রায়শই (এবং ভুলভাবে) নিরীহ কবিতার সঙ্গে চিহ্নিত। প্যাটাক্যুয়রোলাসদের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রচারে, এইসব সম্পাদক ও তাঁদের উপযাজক সমালোচকদের ছোট্ট দলটি, কবিতার অভিমুখগুলোকে অপাংক্তেয় করে তোলে সেই কবিতার সমর্থনে, যা ঐতিহাসিকতা ও প্রথানুগত্য বিসর্জন দেয়। তাঁদের অনুমান, যে কবিতা সাংস্কৃতিকভাবে নগণ্য, তা তাঁদের কবিতার অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও সংশোধনীগুলোর ভিত্তিতে বিরাজ করে।

        একটু দাঁড়ান… শুনতে পাচ্ছেন না? প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির নির্মিত তক্তার নীচে কবিতার The tell-tale heart স্পন্দিত হচ্ছে, “জোরে- জোরে- আরো জোরে!” আর কত কাল লাগবে সেই মুহূর্ত আসার, যখন সিমিকরা, ভেন্ডলাররা, বেন মাইকেলরা ও ফেনজারা তাদের প্রকৃত মনোভাব আর গোপন করতে পারবে না আর চিৎকার করবে ─

     “আমি এই ঘটনা স্বীকার করছি!─ তক্তাগুলো সরিয়ে ফেলুন!─ এখানে, হ্যাঁ এখানে!─ এ তার পাশবিক হৃদস্পন্দনের শব্দ!”[33]

     প্রিয় পাঠক, আপনি কি এখনও দেখতে পাচ্ছেন না যে, এরা সেই উগ্রপন্থী, যারা নিজেদের সেই মূল্যবোধের গোমস্তা হিসাবে দাবি করে, যাকে তারা সক্রিয়ভাবে ধ্বংস করার জন্য মেতে উঠেছে। পাঠক! দেরি হওয়ার আগে আপনাকে শোনার জন্য আমি অনুরোধ করছি!

    পাগলরা আমাদের বন্দী করেছে আর বলছে, আমরা বিপথগামী, বাঁদর, পোকামাকড়, বেনামি স্কিজোফ্রেনিক!

————

ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Episode-5)

অনুসৃজন প্রকল্প :

এটি একটি ধারাবাহিক অনুসৃজন প্রকল্প। চার্লস বার্ন্সটাইনের “The Pataquerical Imagination: Midrashic Antinomianism and Promise of Bent Studies” প্রবন্ধটির ধারাবাহিক অনুসৃজন। এই পঞ্চম পর্বে আটটি পরিচ্ছেদ অনুসৃজন করা হল। ইংরেজি সংস্করণ অংশুমালীর ইংরেজি সেকশানে। এই প্রবন্ধটি ২০১৬ সালে শিকাগো ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত বার্ন্সটাইনের কাব্যতত্ত্বের বই Pitch of Poetry গ্রন্থটিতে সংকলিত হয়। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

১ম পর্ব পড়ুন এখানে >>>

২য় পর্ব পড়ুন এখানে >>>

৩য় পর্ব পড়ুন এখানে >>>

৪র্থ পর্ব পড়ুন এখানে >>>


[1] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখন কাব্যগ্রন্থের ৯ নম্বর কবিতা, সঞ্চয়িতা, পৃঃ৭৫০ প্রকাশনা বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, ২০০৩

[2] The writings of Marcel Duchamp, ed. by Michel Sanouillet and Elmer Peterson, Da Capo Press, New York, 1973.

[3] অতিচেতনার কথা─ বারীন ঘোষাল, কৌরব, কলকাতা, ১৯৯৬

[4] Pitch of Poetry by Charles Bernstein, Chicago: University of Chicago Press, 2016.

[5] Capra Fritjof. 1975. Tao of Physics. Boulder, Colorado: Shambhala.

[6] Topsy-Turvy by Charles Bernstein, University of Chicago Press, forthcoming, https://press.uchicago.edu/ucp/books/book/chicago/T/bo89190337.html

[7] কলিম খান ও রবি চক্রবর্তী, বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থের অভিধান, ভাষাবিন্যাস, ২০০৯

[8] আনমিতলজি – আনমিত+logy = Bent Studies

[9] Antinomianism- Etymology < Greek ἀντί against + νόμος law, an ism to believe that they are not bound by moral law, instead they require to break a moral (or religious or Biblical)law.

[10] For more on dèlire, see Jean-Jacques LeCercle, Philosophy through the Looking-Glass: Language, Nonsense, Desire (La Salle, IL: Open Court, 1985).

[11] I provide a list of my own anti–bachelor machines at “What, Me Conceptual?,” with special reference to “Recantorium: A Bachelor Machine after Duchamp after Kafka,” writing.upenn.edu/pennsound/x/Bernstein-Tucson.html. “Recantorium” was collected in Attack of the Difficult Poems. See Michel Carrouges, Machines célibataires (Paris: Arcanes, 1954, 2nd ed. 1976). De Certeau discusses the “celibate machines” of Jarry, Roussel, Duchamp, and Kafka in The Practice of Everyday Life (Berkeley: University of California Press, 1984), 150–53. Deleuze and Guattari discuss “celibate machines” in Anti-Oedipus (Minneapolis: University of Minnesota Press, 1983), 17–19. See also Lecercle, Philosophy through the Looking Glass.

[12] For a case study, see “Disfiguring Abstraction” in this collection. The Hegelian orthodontics of the avant-garde was exemplified in a discussion at a planning meeting at the Museum of Modern Art, discussed in the essay. My suggestions that the most radical and contradictory energies of modernist art were at risk of being contained by museum abstraction were rebuffed in a telling instance of how aesthetically challenging art can been subsumed into the new normal. Avant-garde poetry and art, by definition, are susceptible to the lure of the pataqueronormative: it is, for us, as powerful as the sirens for Odysseus.

[13] “The iron hand crushd the Tyrants head / And became a Tyrant in his stead,” as Blake succinctly puts it in “The Gray Monk.” I read the poem here: www.rc.umd.edu/pop-blog/charles-bernstein-reads-grey-monk-william-blake.

[14] My transcription of the Dickinson holograph (ca. 1861), from fascicle 13, reproduced in The Manuscript Books of Emily Dickinson, ed. R. W. Franklin, 2 vols. (Cambridge, MA: Harvard University Press, 1981), and published by Johnson as no. 258, 1:185. A version of the work was first published in 1890 in the Roberts Brothers first edition of Dickinson’s poems, edited by Mabel Loomis Todd and T. W. Higginson, numbered XXXI but otherwise untitled; it is the last poem in the sequence titled “Nature.” The third line in this version is given as “That oppresses, like the weight.”

[15] I queried Ralph Franklin on this alternate reading (personal communication, October 15, 2005); he replied that the where reading was supported by close differentiation of the way Dickinson formed her ns and rs and pointed to a comparison with “I know some lonely houses” in the same fascicle (p. 259 of the Manuscript Books): Where in the eighth line and the n in Wooden in the fourth line. However, other comparisons underscore a different reading. Consider the standard identification of when and where from fasc. 16, ca. 1862, the poem Johnson numbers 327, lines 16 and 20, where the two words are clearly differentiated and when looks as it does in “There is a certain Slant of light.” See these and other examples at writing.upenn.edu/bernstein/misc/ED-slant.html.

[16] Content’s Dream, 137, n. 18, echoing Charles Olson’s “polis is/eyes” in “Letter 6,” The Maximus Poems (Berkeley: University of California Press, 1985), 30

[17] The Creeley essay is collected in this book. Fenza is offended by my remark that Creeley offers “a bulwark against poetic uniformitarianism and complacency.”

[18] Counter-revolution of the Word (Chapel Hill: University of North Carolina Press, 2007), 205–7. I discuss this book in “Anything Goes” in Attack of the Difficult Poems. Dehumanization is a staple of attacks against Barack Obama. In the summer of 2010, in the heat of the presidential election campaign, Ted Nugent evoked Poe’s “perfect army of . . . Chimpanzees”: “I have obviously failed to galvanize and prod, if not shame, enough Americans to be ever-vigilant not to let a Chicago communist-raised, communist-educated, communist-nurtured subhuman mongrel like the ACORN community organizer gangster Barack Hussein Obama to weasel his way into the top office of authority in the United States of America.” No doubt he was winking, but he still ran into difficulties, even though “mongrel” is a possible reverse pataquerical and was used by Obama himself in this way (though not without controversy when he did). See Charles Blow, “Accommodating Divisiveness,” New York Times, February 21, 2014, A19. See also “President Obama Calls African-Americans a ‘Mongrel People,’” The Hill, July 29, 2010, thehill.com/homenews/administration/111611-obama-calls-african-americans-a-mongrel-people-. On the TV show The View (July 29, 2010), Obama said of African Americans: “We are sort of a mongrel people. I mean we’re all kinds of mixed up. That’s actually true of white people as well, but we just know more about it.” While mongrel suggests menacing and barbaric, insect suggests something more fundamentally alien. Rush Limbaugh has accused Obama of wanting to infect America with the deadly Ebola virus, while Michael Savage dubbed him “President Ebola” (www.npr.org/2014/10/09/354890869/in-u-s-ebola-turns-from-a-public-health-issue-to-a-political-one). This relates to the stigma of the angry black man as a demonic “it,” as in the September 16, 2014, grand jury testimony of Ferguson, Missouri, police officer’s killing of Michael Brown Jr.: “The only way I can describe it, it looks like a demon, that’s how angry it looks, that’s how angry he looked.” (documentcloud.org/documents/1370494-grand-jury-volume-5.html).

[19] Cited by Amy Paeth in State Verse Culture: American Poets Laureate, 1945-2015, Ph.D. dissertation, University of Pennsylvania, 2015. The Fenza report is at awpwriter.org/application/public/pdf/AWPAnnualReport13.pdf. Lippman is quoted from Preface to Politics (New York: Mitchell-Kennerley, 1914), 189.

[20] Robert Frost, “The Gift Outright,” poetryfoundation.org/poem/237942. Bob Perelman and Derek Walcott discuss the poem at MAPS, english.illinois.edu/maps/poets/a_f/frost/gift.htm. See also Susan Howe, The Birth-Mark: Unsettling the Wilderness in American Literary History (Middletown: Wesleyan University Press, 1993) and “Artifice of Absorption” in A Poetics.

[21] In “Towards a Translation Culture” (2011), Lawrence Venuti takes this up from the point of view of an institutional preference for “belletristic” translations that are resistant to reflecting on their poetics. M-Dash, mdash-ahb.org/the-translation-forum/1-towards-a-translation-culture.

[22] E. Y. (Yip) Harburg from The Wizard of Oz (1939); a second-wave modernist, born Isidore Hochberg (1896–1981).

[23] Rachel Donadio, “The Closest Reader,” New York Times Book Review, December 10, 2006. This article provides the date of Vendler’s New Yorker appointment. Leonard is speaking of personal rather than aesthetic agendas, but the Cold War rhetoric of freedom from agendas is most striking because it represses the bait-and-switch.

[24] Helen Vendler, review of America: A Prophecy, ed. Jerome Rothenberg and George Quasha, New York Times Book Review, December 30, 1973, and Jerome Rothenberg, Book Review letter to the editor, January 27, 1974. Disclosure: Vendler includes me in the ranks of the unintelligible in a passing dismissal in a June 12, 2008, review of Jorie Graham, “A Powerful, Strong Torrent”: “And Graham, unlike such Language Poets as Charles Bernstein and Susan Howe (whose moment seems to have expired), always rewardingly makes sense, whatever her acrobatics.” (Neither Howe’s, Rothenberg’s, nor my work has ever been reviewed in NYRB.)

[25] Vendler’s negative review of Rita Dove’s Penguin Anthology of American Poetry in New York Review of Books (November 24, 2011) created an unprecedented mainstream backlash against Vendler. But it should be noted that Vendler was a prominent proponent of Dove and that Dove in her anthology largely follows Vendler’s proscriptions as given in the quoted review: only three of these mocked poets (H.D., Olson, and Duncan) are included. For a summary of Vendler’s canonical praise of Dove, from a writer sympathetic to her, see thenewyorkerandme.blogspot.com/2011/12/rita-dove-plays-race-card.html.

[26] Motika Rich, “Pulitzer Winner to Take Over as New Yorker’s Poetry Editor,” New York Times, September 20, 2007, E3.

[27] Collected Prose, ed. Donald Allen and Benjamin Friedlander (Berkeley: University of California Press, 1997), 241. Olson understood dogma as the “firm persuasion” of the animate voice (417), which, rhetorically, can be contrasted that with the prototypical deanimated New Yorker poem.

[28] Introduction to Olson’s Collected Prose, xv. I quote the subtitles to Stevens’s “Notes toward a Supreme Fiction.”

[29] Charles Simic, “Getting the World into Poems,” New York Review of Books, June 24, 2010. Simic appears to be NYRB’s designated poetry critic, though Vendler continues to pitch in.

[30] New British Poetry (Minneapolis: Graywolf, 2004).

[31] www.graywolfpress.org/books/new-british-poetry.

[32] The prestige of the awards, like the cultural importance of the New Yorker and NYRB, is not bound to poetry; neither the awards nor the magazines would qualify for a prize based on their historical record of their poetry preferences, but then that is not significant to these organizations, for whom poetry is loss leader, a colorful bit of fluff, or then again a dollop of moral fiber, wrapping paper for the main acts, whether journalism, history, visual art, fiction, or cartoons. But then if all you know about poetry is who wins the major prizes and what these publications present, what else could you think?

[33]Edgar Allan Poe, “The Tell-Tale Heart”(1843), www.eapoe.org/works/reading/pt043r1.htm. See, earlier in this book, Thomas McEvilley’s “hideous flowers of the grave,” which echoes Baudelaire’s “fleurs du mal.” In Simulcast: Four Experiments in Criticism (Tuscaloosa: University of Alabama Press, 2004), Benjamin Friedlander recasts Poe’s reviews with contemporary literary subjects.

ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Episode-5)

পূর্ববর্তী পর্ব পড়ুন এখানে >>>

শেষ পর্ব পড়ুন এখানে>>>>

রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি, লেখক ও অনুবাদক।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

নারীর আপন ভাগ্য জয় করিবার: নারীজাগৃতি ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা।

নারীর আপন ভাগ্য জয় করিবার: নারীজাগৃতি ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা।

নবজাগরণের সঙ্গে নারীর জাগরণ, নারীর মর্যাদা ও সুরক্ষা, এবং নারীমুক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভারতে এই নবজাগরণের…..